Readford Foundation

একদিন আমাদের এক উর্ধ্বতন টিম মেম্বার যশোরের শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাচ্ছিলেন— একটি পুরনো রিকশায় চড়ে। চালকের আসনে ছিলেন এক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ — চোখে সময়ের জংধরা ক্লান্তি, শরীরে বছরের পর বছর সংগ্রামের ছাপ আর গলায় ইতিহাসের গুমরে রাখা দীর্ঘশ্বাস৷ পথ পেরোনোর সাথে সাথে জমতে থাকে দুজনার মাঝে কথার সেতু।

আলোর খোঁজে রিকশার চাকা ঘোরে

শুরুতে কিছু কথা, তারপর সেই কণ্ঠে ফেটে পড়লো নীরব আর্তনাদ— একটি পরাজিত জীবনের করুণ কাব্য। গল্প এগোতেই, ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে ছলছল করছিলো চোখ মুখ আর জীবনের আড়াল রাখা অধ্যায়— কত কষ্ট, কত ক্লান্ত, কত রাত নির্ঘুম, কতটা অভাব-অনটন, অনাহারী জীবন আর সমাজের নীরব অবহেলার গল্প।

“পেটপুরে ভাত খাই না অনেক দিন হলো, মেয়েটার ঔষধ শেষ, আর কুলায় না মামা… সারাদিন যা ইনকাম করেছি তা দিয়ে মেয়ের একবেলা ঔষধ হয়” — অমনি চোখ মন ভিজে এলো যেন হঠাৎই, ভাবতে লাগলো কীভাবে তার মেয়ের তিনবেলার ঔষধ পাবে? কীভাবে খাবার পাবে? বাঁচবে কীভাবে? মনে হলো, মানবতার করুণ সুরে একটি জাতির গভীরতম বেদনা ধ্বনিত হচ্ছে৷ রিকশার চাকা ঘুরছিল ঠিকই, কিন্তু সেই মুহূর্তে থমকে গেল আমাদের মনন। বৃদ্ধের ভাঙা গলায় যেন গোটা দেশের দারিদ্র্য, অসহায়ত্ব আর অবহেলার দলিল লুকিয়ে ছিল।

রিডফোর্ড ফাউন্ডেশন টিম তার পাশে দাঁড়াল— শুধু সহানুভূতির ছায়া নয়, সহযোগিতার দৃঢ় হাত প্রসস্থ করে। একবেলা খাবার নয়, আমরা দিতে চাইলাম সম্মান, স্থায়িত্ব, এবং জীবনের নতুন আশার আলো।

আমাদের স্বপ্ন—এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে কোনো বৃদ্ধ রিকশাচালককে আর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নীরবে কাঁদতে না হয়; যেখানে মানবতা হবে সবচেয়ে বড় পরিচয়, এবং দারিদ্র্য থাকবে শুধুই অতীতের কুয়াশায় ঢাকা এক গল্প।
রিডফোর্ডের পথচলা সেই স্বপ্নেরই অনবদ্য প্রতিচ্ছবি—যেখানে প্রতিটি সহানুভূতি রূপ নেয় দায়িত্বে, আর প্রতিটি দায়িত্ব পরিণত হয় পরিবর্তনের দীপ্ত শপথে।

আলহামদুলিল্লাহ আমরা দাঁড়িয়েছিলাম তার পাশে—তৎক্ষণাৎ, নিঃস্বার্থ, নিঃশর্ত। কিছু খাবার আর ঔষুধ নয়, আমরা দিতে চেয়েছিলাম স্বপ্ন, সম্ভাবনা আর সম্মান।

আমরা বিশ্বাস করি—বাংলাদেশ শুধু নদী ও ফসলের দেশ নয়, এ দেশের আসল সৌন্দর্য হলো তার মানুষ, তার হৃদয়, তার সম্মিলিত স্বপ্নে। আর সেই স্বপ্ন একদিন দারিদ্র্য ও বঞ্চনামুক্ত একটি জাতিতে রূপ নেবে—যেখানে কোনো পিতা আর রাস্তায় হাঁপিয়ে ওঠা রিকশা টেনে বেঁচে থাকার লড়াই করবে না। যেখানে সম্মান ও সহানুভূতির অভাব কাউকে পিষে ফেলবে না। রিডফোর্ড ফাউন্ডেশন সেই ভবিষ্যতের দ্বাররক্ষক হতে চায়।

আমরা জানি, আমাদের প্রচেষ্টা অতি ক্ষুদ্র—কিন্তু প্রতিটি বড় পরিবর্তনের শুরু হয় একটি ছোট মুহূর্ত থেকে। আমাদের সেই মুহূর্তটি জন্ম নিয়েছে এক বৃদ্ধ রিকশাচালকের চোখের জল থেকে।

আপনার সহানুভূতি, আপনার ভালোবাসা, আপনার শক্তি আমাদের এই যাত্রাকে আরও গতিশীল করেছে৷